ড্রয়ার থেকে মানিব্যাগটা বের করে পকেটে নিয়ে কাছের সুপার শপের উদেশ্যে রওনা হলো হাসান । বের হয়ে এক বন্ধুর সাথে দেখা , তার সাথে গল্প করতে করতে হাসান হাটতে থাকলো । পথে একবার টং থেকে চা পান করে নিলো দুই বন্ধু। সুপার শপে ঢুকে শপিং শেষ করে কাউন্টার এ পেমেন্ট করতে গিয়ে হাসান এর মাথায় হাত। পকেটে মানিব্যাগ নেই। ভুলে কোথাও পড়ে গেলো নাকি পকেটমার নিয়ে গেলো ? কিছুতেই মনে করতে পারছে না সে। মোবাইল ব্যাংক এর অ্যাকাউন্ট দিয়ে পেমেন্ট করে বাড়ী ফিরল সে।
মানিব্যাগ এ টাকা তেমন ছিল না কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু জিনিশ ছিল। NID , ব্যাঙ্ক এর কার্ড ইত্যাদি। মন খারাপ করে ব্যাংকে ফোন দিয়ে কার্ড গুলো ইনঅ্যাক্টিভ করতে বলে দিলো সে ।
৩ দিন পরের ঘটনা। ফেসবুকে হাসান দেখল এক বন্ধু তাকে একটা বড় গ্রুপ এর একটা পোষ্টের কমেন্ট এ ট্যাগ করেছে। ক্লিক করে দেখল একজন একটা মানিব্যাগ পেয়েছে রাস্তায়, যেহেতু অনেক বড় গ্রুপ তাই পোষ্ট দিয়েছে যে মানিব্যাগ এর মালিককে পাওয়া যায় কিনা। সাথে মানিব্যাগ এর ছবি আর এন আই ডি এর নামের অংশটা । হাসান দেখলো আরে এটা তো তার মানিব্যাগ। সাথে সাথে সে পোষ্টদাতা কে ইনবক্স করলো। প্রমাণস্বরুপ মানিব্যাগ এ কি কি ছিল তাও বললো । পোষ্টদাতা মেয়েটি বেশ কয়েকটা প্রশ্ন করে শিউর হয়ে নিলো যে এটা হাসান এরই মানিব্যাগ।
[ থামেন !!! এটা রোমান্টিক কোন গল্পের আর্টিক্যাল নাহ। সম্পুর্ন সায়েন্টিফিক। পড়তে থাকেন। ]
৬ মাস পরের ঘটনা । হারিয়ে ফিরে পাওয়া এক মানিব্যাগ এর জের ধরে হাসান আর মুনিয়ার এখন বেশ মধুর সম্পর্ক। প্রেম হবে হবে করছে। হাসান সিধান্ত নিলো কালকেই মুনিয়াকে প্রপোজ করবে। যা হয় হোক। রাতে ফোনে মুনিয়া কে জিজ্ঞেস করলো আগামীকাল বেইলিরোডে আসতে পারবে কিনা দেখা করতে। মুনিয়া রাজি হলো যে বিকেল ৪ টায় বেইলী রোড থাকবে । হাসান প্ল্যান করে রাখল যে কাল ১২ টার দিকে বের হয়ে ফুল আর গিফট কিনবে তারপর রওনা হবে বেইলী রোডের উদেশ্যে। একটু আগেই বের হবে কারণ ঢাকার জ্যাম ঠেলে উত্তরা থেকে বেইলী রোড যাওয়া সোজা কথা নাহ।
ফুল আর গিফট হাতে নিয়ে জ্যাম এ প্রায় ২ ঘণ্টা বসে আছে হাসান। ওইদিকে ৩ টা বেজে গেছে সে এখনো এয়ারপোর্ট পার হতে পারে নি। বাস থেকে নেমে সে ভাবল রাইড শেয়ারিং সার্ভিস থেকে একটা বাইক ভাড়া করে নেবে । এর থেকে দ্রুত যাওয়ার আর কোন উপায় নেই। রাইড কল করার প্রায় সাথে সাথেই পেয়ে গেলো সে। বাইকে উঠে সে ড্রাইভারকে একটু তাড়াতাড়ি চালাতে অনুরোধ করলো।
খিলখেত পর থেকে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে ৭০ কিমিতে ছুটে চলেছে ড্রাইভার , হাসানকে পেছনে নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ সামনে এক লোকাল বাস বাকিয়ে দিলো। সময় মত দ্রুত ব্রেক করতে না পারায় মুহুর্তের মধ্যে রাস্তা থেকে স্কিড করলো বাইকটা। হাসান শুধু মুখে একটু রক্তের নোনা স্বাদ পেলো । তারপর অন্ধকার আর কিছুই মনে নেই তার।
চোখ মেলে হাসান দেখল হাসপাতালে সে। সামনে ফ্যামিলি আর কয়েকজন বন্ধু। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এসে কিছু পরীক্ষা করে সবকিছু ঠিক আছে বলে আশ্বাস দিলো। কিন্তু যেহেতু সে মাথায় আঘাত পেয়েছে তাই দ্রুত সিটিস্ক্যান করাতে হবে সেটা বলে গেলো।
হাসান ভাবল , ইশ সেদিন অতো তাড়াহুড়া করে না গেলেই হতো। কপাল আমার । কি দুর্ভাগ্য !
একদিন পরে সিটিস্ক্যান এর রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার এলো হাসান এর সাথে কথা বলতে।
আপনার জন্য একটা সুসংবাদ এবং একটা দুঃসংবাদ আছে ডাক্তার বললেন । দুঃসংবাদ টা আগে বলুন। হাসান বললো ।
- আসলে দুটো সংবাদ একই
- মানে ? হাসান এর মনে সংশয়
- আপনার সিটিস্ক্যান এর রিপোর্ট ভালই এসেছে। আল্লাহ রহমতে অ্যাকসিডেন্ট থেকে তেমন মেজর কোন প্রব্লেম হয় নি। কিন্তু সিটিস্ক্যান থেকে আমরা আপনার ব্রেনে একটা টিউমার পেয়েছি।
হাসান কিছুক্ষণ জন্য স্থবির হয়ে গেলো। বুঝতে পারছিলো না সে কি বলবে বা কি করবে। - তবে ভালো ব্যাপার হচ্ছে টিউমারটা একদম ইনিশিয়াল অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে , তাই ছোট্ট একটা অপারেশন করেই রিমুভ করে ফেলা যাবে । সাধারণত এই টিউমারটা অনেক দেরি তে ধরা পরে আর তখন অনেক দেরী হয়ে যায় । রোগীকে সাধারণত বাঁচানো যায় নাহ ।
৪-৫ মাস পরের ঘটনা । দুর্ঘটনা আর সাকসেসফুল টিউমার অপারেশন এর পর এখন বেশ সুস্থ হাসান। নিয়মিত সব কাজ করতে পারছে সে। মুনিয়ার সাথে বিয়ের ব্যাপারটাও অনেক দুর এগিয়েয়ে গিয়েছে। বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে
হাসান ভাবলো, ইশ সেদিন অতো তাড়াহুড়া না করলে হয়তো অ্যাকসিডেন্ট ও হত না টিউমারটাও ধরা পরতো না। হয়তো এই বিকেলটাও দেখা হত নাহ। কপাল আমার । কি সৌভাগ্য !
মুহুর্তের মধ্যে হাসান মনে একটা প্রশ্ন ঝলক দিলো। আক্সিডেনটা কি তার জন্য সৌভাগ্য ছিল না দুর্ভাগ্য ছিল?
ভাবতে ভাবতে ড্রয়ার থেকে মানিব্যাগটা বের করে পকেটে নিয়ে কাছের সুপার শপের উদেশ্যে রওনা হলো হাসান । বের হয়ে এক বন্ধুর সাথে দেখা , তার সাথে গল্প করতে করতে………।।
=======
এবার পাঠক, আসুন মুল কথায় । হাসান এর গল্পটা কি খুব হিজিবিজি লাগছে ? মনে হচ্ছে আপনার জীবনের অনেক কিছুর সাথেই মিলে যাচ্ছে ? বিশেষ করে একটা জিনিশ সৌভাগ্য ছিল না দুর্ভাগ্য ছিল সেটা ভেবে কুল না পাওয়াটা ?
বিজ্ঞানের ভাষায় এটকে বলা হয় নোভা ইফেক্ট/ Nova Effect । যেটা ডিফাইন করে যে আপনি যেটা দুর্ভাগ্য ভাবছেন সেটা আপনার জন্য সৌভাগ্য হতে পারে আবার সৌভাগ্যটা দুর্ভাগ্যও হতে পারে। নির্ভর করে আপনি কি ভাবে ভাবছেন বা কি বিশ্বাস করছেন ।
এটা প্রথম দার্শনিক Charles Taylor তার A Secular Age বইয়ে লিখেন । বইটি ২০০৭ সালে হাভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। যেখানে লেখক বর্তমান সময়ে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস এর পরিবর্তন নিয়ে কথা বলছেন । এই বইটি ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত Gifford Lectures থেকে অনুপ্রাণিত ।
পুরো নাম Charles Margrave Taylor । তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৩১ সালে Canda এর Montreal, Quebec এ।
আপনার কি কোন নিজের জীবনের কোন নোভা ইফেক্ট এর কথা মনে পড়ে ?
রেফারেন্স ১ঃ A Secular Age https://en.wikipedia.org/wiki/A\_Secular\_Age
রেফারেন্স ২ঃ Gifford Lectures https://en.wikipedia.org/wiki/Gifford_Lectures