প্রকৃতির সৌন্দর্যে শোভিত অপরূপ এক লীলাভূমি সিলেট। অপরুপ সিলেটের অপরুপ আরেক জায়গা বিছানাকান্দি। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বিস্নাকান্ডি
বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হতে পারে যে মাত্র ২৪ ঘন্টায় বিছানাকান্দি ভ্রমণ সম্ভব হতে পারে। তবে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি বাস্তব ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে।
কে কে ছিলামঃ
ছিলাম আমরা দুইজন। আমি আর বন্ধু উজ্জ্বল।
যাত্রা শুরুঃ
- সকাল ০৬.৫০ | ৬ মে
আমাদের যাত্রা শুরু ট্রেইন দিয়ে, “পারাবাত এক্সপ্রেস” । সুচি অনুযায়ী সকাল ০৬.৪০ এ ছাড়ার কথা। মাত্র ১০ মিনিট লেট। আমরা ছিলাম “ফার্ষ্ট ক্লাস চেয়ার” ক্লাসে। তারপরও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া পর্যন্ত লোকাল বাস এর মত যাত্রী দাড়িয়ে যাচ্ছিলো। এটা একটু বিরক্তির কারন ছিল।
তারপরও আশেপাশের নয়নাভীরাম সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দুপুর ২.৩০ টায় আমরা পৌছে যাই “সিলেট রেল ষ্টেশন”
এ । সিলেট ষ্টেশন থেকে সোজা জিন্দাবাজারের পাশে জল্লার পার এলাকার দাড়িয়া পাড়ায় “পাঁচ ভাই রেষ্টুরেন্ট”-এ। রিকশা ভাড়া ৫০ টাকা।
- দুপুর ০৩.০০ টা | ৬ মে
সাইনবোর্ডে লেখা রেস্তোরাঁর নাম। ভেতরে ঢুকে চোখ ছানাবড়া। মহাযজ্ঞ চলছে । ডান দিকে নানা রকম কাবাব আর ভাজাভুজির আয়োজন। আর একটু সামনের দিকে লাচ্ছি-জুসের কারবার। ভীড় লেগেই আছে সবসময়। খুবই কম খরচে অসাধারন খাবার এর আয়োজন পাচ ভাইয়ে। আমরা দুই জন মুরগি, ভর্তা , ডাল দিয়ে উদোর পুর্তি করেও বিল হয়েছিল মাত্র ২১০ টাকা। এর পাশেই পানসি, ভোজন বাড়ী রেস্টুরেন্ট ও আছে। এদের খাবার এর ও বেশ নাম ডাক রয়েছে।
- দুপুর ০৩.৩০ টা | ৬ মে
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রওনা দিলাম আমরা মজুমদারির উদ্দেশ্যে। নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ২০ টাকা রিক্সা ভাড়া। সে খান থেকে সিএনজি ভাড়া পাওয়া যায় হাদারঘাট পর্যন্ত। রিজার্ভ যাওয়া যায় ১২০০ — ১৫০০ টাকায়। আমরা একটিতে অন্য যাত্রিদের সাথে গিয়েছিলাম দুইজন ৩০০ টাকায়। (জনপ্রতি ১৫০/-)।
হাদারঘাট পর্যন্ত রাস্তা বেশ আগোছালো, ভাঙ্গা। ২.৩০ থেকে ০৩.০০ ঘন্টা লাগে। আমরা ৬ টা নাগাদ পৌছে গিয়েছিলাম হাদারঘাট।
- সন্ধ্যা০৬.০০ টা | ৬ মে
হাদারঘাট পৌছে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। কারন এত দূর কষ্ট করে এসেও সন্ধ্যা প্রায় পরে যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় তো আর সে বিছানাকান্দি যাওয়া যাবে নাহ। ইঞ্জিন নৌকায় যেতে ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগে। ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। তো এখান থেকেই ফিরে যাওয়ার কথা ভাবসিলাম। তারপর অন্য একটা গ্রপের সাথে আমরা ৪০০ টাকায় ব্যবস্থা করে দেয় আমাদের সি এন জি ড্রাইভার। (জনপ্রতি ২০০/-)
- সন্ধ্যা ০৬.০০ — ০৭.০০ | ৬ মে
যদিও অল্প সময়। তারপরও মাঝির নিদারুন দক্ষতায় আমরা ৩০ মিনিটের মাথায় পৌছে যাই বিছানাকান্দি। এর সৌন্দর্য আসলে ব্যাখ্যাতিত। ঝকঝকে শীতল পানির প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ে, বড় বড় পাথর আঁকড়ে ধরে শৈবাল হওয়া। সামনে সবুজে ঘেরা উঁচু উঁচু পাহাড়। এখানে যেনো স্বর্গ এসে মিশে গেছে শ্রোতে।
- সন্ধ্যা ০৭.০০ — ০৭.৪০ | ৬ মে
আবার একই নৌকাযোগে ফিরে এলাম হাদারঘাটে। পুরো সন্ধ্যা নেমে গেসে তখন। যে সি এন জি তে এসেছিলাম তাতেই আবার উঠে পরলাম। কিন্তু এবার সন্ধ্যা হবার কারনে যাত্রি আমরা দুইজনই। তাই অনেকটা রিজার্ভ ভাড়া। ৭৫০/- টাকা মজুমদারি পর্যন্ত।
- রাত ১০.০০ টা | ৬ মে
এসে পৌছলাম মজুমদারি। রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম মাজারগেট এরিয়ায়। সেখান থেকে রাত ১২ টার টিকেট কিনলাম “ইউনিক” বাসের। ভাড়া ৪৭০ টাকা করে। হাতে বেশখানিকটা সময় থাকায় হালকা কেনাকাটা করে, পাচ ভাইয়ে রাতের খাবার খেয়ে আবার ফিরে এলাম বাস কাউন্টার এ। বাস ছাড়ল রাত ১২.৫০ এ।
- রাত ১২.৫০ টা | ৭ মে
অবশেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম আমরা। শুধু ঘুমিয়েছি দেখি নাই কিছু। মাঝে যাত্রা বিরতিতে হবিগঞ্জ পানসি রেষ্টুরেন্টে হালকা খাওয়া দাওয়া করে, বাস এ উঠে আবার ঘুম।
- সকাল ০৬.২০ | ৭ মে
সায়েদাবাস বাস স্ট্যান্ড এ। বাস থেকে নেমে তুরাগ এ উঠে সোজা বাসায়। সময় সকাল ০৬.৪৫।
এই ছিল আমাদের ২৪ ঘন্টার বিছানাকান্দি ভ্রমণ, দেখা যাক পরবর্তি গন্তব্য কোথায় হয়।।