Skip to content

স্বপ্নদুঃস্বপ্ন-আর-কিছু

by saif71 | Last Updated:
April 23, 2013 | 09:20 PM
স্বপ্নদুঃস্বপ্ন-আর-কিছু

স্বপ্ন দেখে না এমন মানুষ দুনিয়াতে আমার জানা মতে নাই।ভবিষ্যতেও হবে না।এই সিরিজে আমরা স্বপ্ন, এর বিভিন্নতা,প্রকার এবং অন্যান্য আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। স্বপ্ন নিয়ে ব্লগ সিরিজ লেখার আগে আমি স্বপ্ন নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছি। খুব মজার কিছু তথ্য পেয়েছি যেমন বলা যায় স্বপ্নের প্রকারভেদ। অদ্ভুতভাবে একজন সাধারণ ছেলে,সাধারণ মেয়ে এবং বিজ্ঞানী এই শ্রেণীর স্বপ্নের প্রকারভেদ সম্পর্কে মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন।

স্বপ্ন কত প্রকার ও কি কি ?

বন্ধু মহলে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আমার এক বান্ধবীর কথা বলি,তার কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম, “তুমি কোন কোন ধরনের স্বপ্ন দেখো”? তার উওর ছিল এরকম, “আর স্বপ্ন?[???] কে দেখার পর থেকে তো আমার রঙিন স্বপ্নগুলো পুরো জীবন্ত স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে,সাদাকালো স্বপ্নগুলো পুরো মুছে গেছে।…….” তারপর আর নাই বা বললাম তার স্বপ্নের কথা।আশা করি বুঝতে পারছেন!!! তারপর আমার এক বন্ধুর স্বপ্নের প্রকারভেদ শুনুন। তার ছদ্মনাম “আলীরাজ”।*

আমি:ভাই,ভাবতেছি স্বপ্ন নিয়ে একটা Post লিখব। আলীরাজ:ঐটা তোর স্বপ্নেই রাখ। আমি:একটু Help কর।স্বপ্ন কয় প্রকার বলতো? আলীরাজ:আমি কি জানি?আমি তো স্বপ্ন বিশারদ না। আমি:আহা!তোর নিজের মতামত দে। আলীরাজ:আচ্ছা।স্বপ্ন ১২ প্রকার।যথা: ১.ছোট ২.বড় ৩.মাঝারি ৪.ন্যানো ৫.ফর্সা ৬.কালো ৭.সত্য ৮.মিথ্যা ৯.ভ্যাবলা ১০.মগা ১১.Stupid ১২.কানা

আমি কিন্তু এই জাতের স্বপ্নের একটারও আগা মাথা বুঝি নাই।কেউ বুঝলে জানাবেন। তবে হ্যা বৈজ্ঞানিকভাবে আসলেই স্বপ্নের কয়েকটি প্রকারভেদ করা হয়।

এই দুই রকম স্বপ্নের মধ্যেও আছে বিভিন্ন রকম।যেমন: বাস্তব স্বপ্ন, কাল্পনিক স্বপ্ন ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তার আগে চলুন দেখে নেই স্বপ্নের সংজ্ঞা।

স্বপ্ন আসলে কি ?

বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ শুধু ঘুমের মধ্যেই নিজের অজান্তে যা দেখে তাই শুধুমাএ স্বপ্ন নয়, বরং মানুষ যে কোন সময় নিজের অজান্তেই তার মস্তিষ্ক কর্তৃক যে অনির্দিষ্ট অবাস্তব ঘটনার সম্মুখীন হয় তাই স্বপ্ন।

আবার Wikipedia এর মতে,

স্বপ্ন হল মানুষের জীবনের ঘটনা, মন্তব্য, ইচ্ছা, আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি দ্বারা সৃষ্ট এমন এক ঘটনা যা মানুষ মনের ভিতর সংঘটিত হয়।ঘুমের সময় যা সবচেয়ে বেশি হয়।

মানুষ স্বপ্ন কেন দেখে?

এই প্রশ্নের উওর খুঁজতে গেলে আমাদের ১ম ই যা জানতে হবে তা হল এই স্বপ্ন উৎপাদনের পিছনে মূলে কে? উওর, মস্তিষ্ক।মস্তিষ্ক নামক এই জিনিসটা যখন শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আপাতদৃষ্টে স্থির থাকে (ঘুমের সময়) তখন সে তার কাজ চালিয়ে যায়। যেমন: রক্ত সংবহন, অক্সিজেন সরবরাহ ইত্যাদি।এসব কাজের মধ্যেও আমরা যেমন PC এর File গুলো সাজিয়ে রাখি, মস্তিষ্ক তেমনি পুরনো ও নতুন স্মৃতিগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে।আর এই কারণেই মানুষ স্বপ্ন দেখে।

স্বপ্নের মধ্যে হাটাহাটি, মারামারি, কান্নাকাটি!!!কেন?

এই প্রশ্নের উওর অনেক জায়গায় অনেক জটিল ভাবে আছে।এগুলোর সারমর্ম নিয়ে সহজ বাংলা করলে উওরটা দাড়ায়, আমরা জানি যে আমরা ঘুমিয়ে থাকলেও আমাদের মস্তিষ্ক অবিরাম Defragment এর কাজ চালিয়ে যায়।এমন সময় অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর প্রতি নির্দেশ থাকে যে তারা নিষ্ক্রিয় থাকবে। এখন ধরুন আপনার মস্তিষ্ক এমন একটা স্মৃতিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে যাতে আপনি হয়তো ফুটবল খেলছিলেন।ব্যাস…….অনেক সময়ই আপনার অতি মাতবর হাত পা গুলো পুরানো নির্দেশ ভুলে গিয়ে ঐ স্মৃতি অনুযায়ী………দে দৌড়!!! 😛 একই কারণে হাসি, কান্না, লাফালাফি ইত্যাদি অনেক সময়ই ঘুমন্ত মানুষের মধ্যে দেখা যায়। কারণটা আমি সবার সুবিধার্থে সহজ বাংলায় লিখলাম তাই বেশ হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই কারণ আর এটার পুর্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও কিছুটা জটিল।

ইতিহাস কি বলে?

শুনে হয়তো একটু অবাক লাগতে পারে যে স্বপ্নের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক কি? আছে রে ভাই আছে!!! ইতিহাস বলে এই যে ঘুমের মধ্যে হাটাহাটি, কান্নাকাটি এসব সাধারণ কর্মকাণ্ডের সাথে নাকি ঘুমের মধ্যে হত্যাকাণ্ড সংঘটনেরও রেকর্ড আছে।

ক্যাথরিন মেরি নাইট। জন্ম ১৯৫৫ সালে এবং মৃত্যু ১৯৮৭ সালে। খুবই সম্ভ্রান্ত এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে অর্থাৎ তার বয়স যখন ১৩ বছর তখন তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয় একটি মানবাধিকার সংস্থা।তার পরিবারের প্রতি অভিযোগ ছিল যে তারা ক্যাথরিনের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছিল।এবং অভিযোগ তোলেন ক্যাথরিন নিজেই।

তার পরিবারে ছিল তার তিন ভাই,বাবা এবং চাচা।এসব ঘটনার পর থেকে তিনি পুরুষদের সম্পূর্ণ ঘৃণা করতেন।তারপর তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন “ডেভিড কিলেট” নামক এক সহকর্মী।ঘৃণা সরিয়ে ক্যাথরিনের মনে ভালবাসা জাগিয়ে তোলেন তিনি।অবশেষে ১৯৭৬ সালে বিয়ে করেন তারা।দুই ছেলে আর এক মেয়ের মা হলেন ক্যাথরিন।ঘুমের মাঝে নাক ডাকা ও হাটা চলার অভ্যাস ছিল ডেভিডের।এই নিয়ে মিষ্টি মধুর ঝগড়াও হতো তাদের।তারপর হঠাৎ গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল ক্যাথরিনের তারপর

পাশ ফিরে দেখেন পাশে নেই স্বামী “ডেভিড”।ব্যাপারটাকে প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেননি।কিন্তু বেশ কিছুটা সময় পার হওয়ার পর উঠলেন তিনি।দেখলেন বারান্দায় হাঁটছেন ডেভিড । পিছন থেকে জড়িয় ধরে স্বামীকে চমকে দিতে চুপি চুপি এগিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যাথরিন।কিন্তু তিনি দেখলেন “ডেভিড” ঘুমের মধ্যেই হাঁটছেন, হাতে চকচকে একটা “ছুরি”।

ভয় পেয়ে গেলেন ক্যাথরিন।ডেভিড ঢুকে গেলেন ছেলেমেয়েদের ঘরে।ছোট মেয় ৫মাস বয়সী মেয়েটি ঘুমিয়ে ছিল দোলনায়।অপর দুই ভাই ঘুমিয়ে ছিল বিছনায়।হঠাৎই দোলনায় শুয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটির গলা চেপে ধরলেন ডেভিড।তারপর হাতের ছুরি দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করলেন মেয়েকে।চিৎকার করে উঠলেন ক্যাথরিন।জ্ঞান হারালেন তিনি।পুলিশ আসল,গ্রেপ্তার করা হল ডেভিডকে।

কিন্তু বিচারের শুরু থেকেই ডেভিড বলে আসছিল যে, তিনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন অর্থাৎ তিনি তখন Sleep-walking করছিলেন।বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যার জন্য আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব নেয় ফরেনসিক বিভাগ।বেশ কিছু দিন পর তারা রায় দেন ঘুমের মধ্যে এরকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।

কিন্তু ডা: ম্যাক গর্ডন এর মনে ছিল অন্য প্রশ্ন।তিনি ভাবছিলেন যদি সত্যিই ঘুমের মধ্যে খুন করেন ডেভিড, তবে কেন? তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি পেলেম যুগান্তকারী এক তথ্য।অতীত জীবনে ডেভিড ছিলেন একজন দাগী আসামী।তিন তিনটে খুনের আসামী ছিলেন।তার নিজের মেয়ের মত বাকী তিনটে খুন করেছিলেন তিনি একইভাবে, শিরশ্ছেদ করে।বিচারে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুদণ্ড হয় ডেভিডের।গল্প এখানেই শেষ নয়।দীর্ঘদিন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন ক্যাথরিন।ডেভিডের মৃত্যুদণ্ডের ঠিক ৬ মাস পর ছোট্ট মেয়ের মত একইভাবে আরেকটি খুন হয়।এবারে ক্যাথরিনের ছোট ছেলে।সেই গভীর রাতেই।কিন্তু এবার কে খুন করল?এমন একজন যে ক্যাথরিনের মতই ডেভিডের খুনের প্রত্যক্ষদর্শী।সে হচ্ছে ক্যাথরিনের বড় ছেলে।

স্বামী ও ছেলের এরকম হত্যা কাণ্ড এমন নাড়া দেয় ক্যাথরিনকে যে তিনি ১৯৮৭ সালে নিজের দেবরের নাতিকে হত্যা করে।এজন্য মৃত্যুদণ্ড হয় ক্যাথরিনের।এই খুনটা,তার ছোট ছেলের খুন এবং তার ছোট্ট মেয়ের খুন সবই নাকি একইভাবে,একই কারণ……Sleep-walking-এ!! এসব আক্রমনাত্নক Sleepwalking কে “Homicidal Sleepwalking” অথবা “Homicidal Somnambulism” নামে বৈজ্ঞানিকভাবে অবহিত করা হয়।

অনেকদিন আগে এরকম একটি কাহিনি শুনেছিলাম যে, “এসলে ম্যানহোক”(নামটা একটু অন্যরকম হতে পারে)নামের এক লোকের স্ত্রীর দুটি বোন ছিল।তিন বোনই যমজ ছিল।ঘুমের মধ্যে বিদঘুটে আচরণ করার অভ্যাস ছিল ম্যানহোক-এর।কিন্তু তাই বলে স্ত্রী ও দুই শালীকে হত্যা করবেন গলা টিপে?তাও একই রাতে? স্বপ্ন বিশেষজ্ঞরা বলেন এটা সম্ভব।যে কারও সাথেই হতে পারে এটা।

সাধারনত মানুষ কি কি স্বপ্ন দেখে?

প্রায়ই কত না অবাস্তব স্বপ্ন দেখি আমরা।হয়তো যে স্বপ্নটাকে আপনি ভাবছেন নিতান্ত অর্থহীন হতে পারে সেই স্বপ্নটাই বহন করছে নিগুড় কোন অর্থ।এখন সেইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। স্বপ্ন সবাই দেখি কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার পর বেশির ভাগ স্বপ্নই মানুষ মনে রাখতে পারে না।তবে যে স্বপ্ন সাধারণত প্রায় সবাই দেখে সেগুলো হল:

স্বপ্নের অর্থ

বিস্তর গবেষণার পর আমি এইসব Common স্বপ্নগুলোর অর্থ বের করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন স্বপ্নের ব্যাখ্যা যুগ যুগ ধরে অনেক মানুষ অনেক রকম ভাবে দিয়ে এসেছে। এখন যে অর্থগুলো নিয়ে কথা বলবো সেগুলো একান্তই আমার নিজের খোজাখুজির ফল। সব পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক নাও হতে পারে। প্রথমে শুরু করি ভূত দেখা নিয়ে।

আসলে স্বপ্নের অর্থ নিয়ে লিখতে গেলে ভাই পুরো একটি খোয়াব নামা লেখা লাগবে। সেটা অনেকেই অনেক আগেই করেছে। আমি আর ঐপথে গেলাম না।

বিভিন্ন রকম স্বপ্ন ও তার প্রভাব

স্বপ্নের মধ্যে হাটাহাটি বা ঘোরাঘুরির পরিণতি যে কি ভয়াবহ তা আগে আমরা আলোচনা করেছি। এখন যেটা নিয়ে আলোচনা করব সেটা হল স্বপ্ন দেখার পর অর্থাৎ সচেতন অবস্থায় স্বপ্নের প্রভাব। ইতিহাস বলছে স্বপ্নের প্রভাবে অনেক সময় পৃথিবীর বড় বড় কিছু পরিবর্তন ঘটে গেছে ধর্মীয় দিক দিয়েই চিন্তা করুন।

পুরাণের কাহিনী গুলোতে কত শত মুনি ঋষির পরিচয় পাওয়া যায় যারা স্বপ্নের মাধ্যমে দীক্ষা প্রাপ্ত হয়েছেন। সেই সুদূর হিমালয়ের উঁচু কোন স্থান থেকে শুরু করে গভীর অরণ্যে, বহু মুনি ঋষি স্বপ্নের দীক্ষা প্রাপ্ত হয়ে ধ্যানে বসেছিলেন।

ইসলাম ধর্মে মানুষকে নামাযের আহবান জানানোর জন্য যে আযান দেয়া হয় এবার তার ইতিহাস বলি শুনুন,

মহানবী (সঃ) মদিনাতে হিজরত করার পরে মসজিদে নববীর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেই সকলের জামায়াতের সাথে নামায আদায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। কিন্তু সমস্যা হল নামাযের সময় সকলকে একত্র করার কোন ভাল পদ্ধতি ছিল না। তাই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাহাবাগনদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করলেন। তাতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব উঠেছিল। যেমন:

  1. নামাযের সময় হলেই পতাকা উড়ানো হবে
  2. আগুন জ্বালানো হবে
  3. বাঁশি বা সাইরেন জাতীয় কিছু বাজানো হবে
  4. ঢাক ঢোল বাজানো হবে ইত্যাদি

কিন্তু কোন প্রস্তাবই মন মত না হওয়ায় গৃহীত হয় নি। সভা সেদিনের মত শেষ হল কোনরূপ সিদ্ধান্ত ছাড়াই, সে দিন রাতেই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ স্বপ্নে দেখলেন যে, এক ব্যক্তি শিঙ্গা (বড় বাঁশি) হাতে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি সেই ব্যক্তিকে বললেন, “শিঙ্গাটি আমার কাছে বিত্রিু কর, আমি এর মাধ্যমে মানুষকে নামাযের আহবান করব” তখন সেই লোকটি যায়েদকে বলল যে, “আমি তোমাকে এর চেয়েও উওম পদ্ধতি দিব কি?” তারপর তাকে আযানের বাক্যগুলো বলেন সেই ব্যক্তি। রাত শেষ হলে তিনি মহানবী (সঃ) কে সব খুলে বলেন। মহানবী (সঃ) এর সততা স্বীকার করে হযরত বেলাল (রা:) কে তা শিখিয়ে দিতে বলেন। হযরত বেলাল (রা:) যোহরের আযান দিলে, হযরত ওমর (রা:) বললেন যে তিনিও একইরকম স্বপ্নে দেখেছেন। এরকম এই স্বপ্ন, একই রাতে, একই সাথে ১৪ সাহাবী দেখেন। তখন থেকেই আযানের প্রথা চালু হয়।

এবার একটু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দিকে যাই। সেলাই মেশিন দেখেনি এমন মানুষ সম্ভবত অন্য কোথাও থাকলেও বাংলাদেশে নেই। চলুন জেনে নিই এর আজব এক স্বপ্ন কেন্দ্রিক জন্ম ইতিহাস।

এলিয়াস হাউস। জাতে আমেরিকান। সে সময় সেলাইয়ের সকল কাজ করা হত হাতে। হাউস চিন্তা করলেন এত কাজ যখন যন্ত্রের সাহায্যে হয় তখন সেলাই কেন করা যাবে না। গবেষণা শুরু করলেন তিনি। সবই ঠিক ছিল কিন্তু সুতা সহ সুইটাকে কাপড়ের এফোঁড় ওফোঁড় করতে যেয়ে মস্ত ঝামেলায় পড়লেন তিনি। কারণ সুইয়ের পিছনের দিকে ছিল সুতার জন্য ছিদ্র। এ নিয়ে তিনি মহা চিন্তিত। একদিন রাত্রে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, এক রাজা তাকে বন্দি করে রেখেছে এবং তাকে নির্দেশ দিল, “এখনই সেলাই কল বানিয়ে দিতে হবে” স্বপ্নে সেলাই কল বানানো গেল না। হাউসকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল। স্বপ্নেই কয়েকজন বল্লম নিয়ে তাকর মারতে আসতে লাগল। হাউস দেখলেন বল্লমের কাটার মাথায় ফুটো। তখনই তার ঘুম ভেঙে গেল। চিন্তা করলেন, আসলেই তো! সুইয়ের পিছনে ফুটো না দিয়ে মাথায় ফুটো করলেই তো অনেকটা সহজ হয়ে যায় সেলাই!!! ব্যস….. তৈরি হয়ে গেল সেলাই মেশিন। সেটা যে পৃথিবীতে কি বিপ্লবের সৃষ্টি করেছে তা সুস্থ মানুষ মাত্র সকলেরই জানা আর এত বড় পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে ছোট্ট একটা স্বপ্ন।

Elias Howe

স্বপ্নের প্রভাব

এবার আসুন দেখি স্বপ্নের প্রভাবের ব্যাপারে বিজ্ঞান কি বলে! বিজ্ঞান বলছে কিছু কিছু মানুষের মন থাকে খুবই স্পর্শকাতর, যে কারণেই এ রকম মানুষের উপর স্বপ্নের প্রভাব বেশি থাকে। এতটাই বেশি থাকে যে স্বপ্ন দেখা অবস্থায় হাটা, চলা, ঘুরাঘুরি, হাসি, কান্না এমনকি খুন পর্যন্তও করতে পারে একজন মানুষ। স্বপ্নের প্রভাবে মাঝে মাঝে দুর্দান্ত সাহসী মানুষও অনেক সময় প্রচণ্ড ভড়কে যায় এমনকি হার্ট অ্যাটাক করে মারা পর্যন্ত যেতে পারে।

শুরুতে একটা পুরানো কৌতুকের একটা Modify Version বলি। এক লোক একদিন ডাক্তারের কাছে গেল।

রোগী: ডাক্তার সাহেব আমি বিপদে পড়ছি, আমাকে বাঁচান। ডাক্তার: বলুন, কি সমস্যা! রোগী: আমি খুব ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখেছি। ডাক্তার: কিন্তু ভাই আমি তো মনোবিজ্ঞানের ডাক্তার না। আপনার স্বপ্নের ব্যাপারে কোন সমস্যা থাকলে, কোন মনোবিজ্ঞানীর কাছে যান। রোগী: আরে ভাই, পুরা ঘটনাটা তো আগে শুনেন। আমি গতকাল রাত্রে স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি একটা আইসক্রিম খাচ্ছি। এবং আইসক্রিমটাতে লাইট জ্বলছিল। ডাক্তার: তাতে সমস্যা কি? রোগী: আসলে তার পর সকালবেলা থেকেই আমি আমার মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছি না!!!

স্বপ্নের সাথে সাথে বাস্তবেও মোবাইল, আইসক্রিম ভেবে খেয়ে ফেলা যায় কি না তা আমি জানি না। তবে এ ব্যাপারে বিজ্ঞান ও ইতিহাস কি বলে সেটা আমি আপনাদের বলতে পারি, আপনারাই বিচার করবেন উপরের কৌতুকটা বাস্তবে হওয়া সম্ভব কি না।

আমেরিকার নিউ ইয়র্কে থাকতেন এক ভদ্রলোক। নাম ডেভিড ম্যাকগেইল। ব্যক্তিগত জীবনে সকলের কাছে খুব প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। খুব সহজ, সাধারণ, সুখী মানুষ ছিলেন তিনি। একদিন রাতে পরিবারের সকলের সাথে রাতের খাবার সেরে ঘুমাতে গেলেন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে গেলে তিনি অবাক হয়ে লক্ষ করলেন যে, তিনি তার বাম হাত নাড়াতে পারছেন না। আর কোনদিনই পারেন নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় প্যারালাইসিস এর শিকার হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ সবল মানুষ শুধু শুধু কেন এক রাতের মধ্যে প্যারালাইসিসের শিকার হবেন? আসলে কি ঘটেছিল সে রাতে?

ডাক্তাররা যখন ডেভিডকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বললেন কেবল এক স্বপ্নের কথা। স্বপ্নে তিনি দেখেছিলেন, যুদ্ধ ক্ষেত্রে আছেন তিনি, প্রচণ্ড গোলাগুলি হচ্ছে চারিদিকে। তিনি পালানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু হঠাৎ তার হাতে ভারী কিছু একটা পড়ল, তিনি অনুভব করলেন তার হাতটা তিনি সরাতে পারছেন না। ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। কোনদিনই আর হাত সরাতে পারেন নি তিনি। আপাত দৃষ্টিতে এটা অসম্ভব মনে হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে এটা সম্ভব। স্বপ্ন মানুষের মস্তিষ্কের উপর এতটাই প্রভাব ফেলতে পারে যে, কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে অক্ষম করে দিতে পারে। বোবায় ধরা এই কথাটার সাথে অনেকেই হয়তো পরিচিত। যদিও কুসংস্কার কিন্তু অনেকটা সত্যতা আছে এতে। অনেকেই হয়তো শুনেছেন যে, বোবায় ধরার ফলে মানুষ দম বন্ধ হয়ে মারা পর্যন্ত গিয়েছে। সেটার কারণ স্বপ্নের প্রভাব। তবে স্বপ্নের এই প্রভাব ঠিক কি কারনে এবং কিভাবে পড়ে তা বিজ্ঞানীরা এখনো বের করতে পারেন নি। তবে স্বপ্নের এই প্রভাব অতীতেও ছিল এবং এখনও আছে। আর ভবিষ্যতেও থাকবে।

About Author: 🎉 Salman Hossain Saif (internet username: Saif71).
Lead UX Engineer @ManagingLife LLC. Specialized in design systems, user flow, UX writing, and a certified accessibility specialist. Loves travel and creating meaningful content. Say hi @imsaif71

You may also like


🎉 Have a nice day!